নিজস্ব প্রতিবেদন, দুর্গাপুর : পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে সবচাইতে দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর দুর্গাপুর। এই শহরের সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক পরিবেশ এমন যে দুর্গাপুরে একবার না ঘুরে গেলে কোনভাবেই বুঝে ওঠা সম্ভবপর হবেনা। দুর্গাপুরের ভালো রাস্তা, বাগান ও একাধিক বড় বড় মাল্টিপ্লেক্স থেকে শুরু করে রয়েছে বহু ছোট-বড় অফিস ও ব্যবসায়ীক প্রতিষ্ঠান। রয়েছে বেশ কয়েকটি সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল, রয়েছে একাধিক নামিদামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে অনেক কিছু। সম্প্রতি দুর্গাপুরে তৈরি হয়েছে কাজী নজরুল ইসলাম বিমান বন্দর। শহর দুর্গাপুরেই রয়েছে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার মতন বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান । সম্প্রতি দুর্গাপুরে বেশ কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু তা বলে দুর্গাপুরের চিরাচরিত ঐতিহ্য অর্থাৎ শিল্প এখনো কিছুটা হলেও অবস্থিত রয়েছে ।
যে সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান গুলোতে দুর্গাপুর ও তার পারিপার্শ্বিক এলাকার বহু মানুষ তাদের জীবিকা নির্বাহ করছে। আমরা প্রত্যেকেই জানি যে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতাই একমাত্র প্ল্যানিং সিটি। কিন্তু দুর্গাপুর শহর আর্কিটেক্ট দ্বারা নির্মিত একটি শহর এটা হয়তো আমরা কেউ জানি অথবা কেউ জানিনা। এবার আমরা একটু পেছনের দিকে তাকিয়ে দেখি, বর্তমান দুর্গাপুর শহরের পূর্বের নাম ছিল গোপীনাথপুর। সেই সময় এই গোপিনাথ পুরের জমিদার ছিলেন গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায়। গোপীনাথ চট্টোপাধ্যায়ের ছেলের নামেই দুর্গাপুর শহরের নামকরণ করা হয়েছে। শহর দুর্গাপুরের ওপর দিয়েই বয়ে গিয়েছে দামোদর নদী। এমনকি দুর্গাপুর শহর থেকে মাত্র কিছুটা দূরেই বয়ে গিয়েছে অজয় নদী, অর্থাৎ দামোদর ও অজয়ের মধ্যবর্তী স্থানে এই শহরের অবস্থান। পশ্চিম বর্ধমান জেলার মধ্যে দুর্গাপুর শহর একটি অতি গুরুত্বপূর্ণ শহর রূপেই সকলের কাছে পরিচিত। এই দুর্গাপুর শহরের রূপকার ডক্টর বিধানচন্দ্র রায় ।
দুর্গাপুর শহরের বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ১০ লাখ। জনসংখ্যার বিচারে দুর্গাপুর শহর পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে চতুর্থ বৃহত্তম শহর হিসেবে বিশেষভাবে পরিচিত। ভারতবর্ষের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে দুর্গাপুর শহরের অবদান অনেকটাই রয়েছে , তা কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবেনা। এই দুর্গাপুরে রয়েছে দুর্গাপুর স্টিল অথরিটি অফ ইন্ডিয়া ইস্পাত কারখানা, দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশন, দুর্গাপুর থার্মাল পাওয়ার স্টেশন এর মতন আরও অনেক অর্গানাইজেশন। সম্প্রতি কলকাতার সাথে সাথে তাল মিলিয়ে দুর্গাপুরে গড়ে উঠেছে ছোট-বড় অনেক আইটি ইন্ডাস্ট্রি। শহর দুর্গাপুরের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আগের তুলনায় অনেকটাই বদলেছে বদলেছে জীবন ধরনের সিস্টেম। শহর দুর্গাপুরে একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থাকার কারণে ভারত বর্ষ তথা বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকেও দুর্গাপুরে পড়াশুনা করতে আসে বহু ছাত্র-ছাত্রীও। এক কথায় বলতে গেলে শিক্ষাব্যবস্থার ক্ষেত্রেও দুর্গাপুর একটা বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে।
আমরা সকলেই জানি যে যেকোনো বড় শহর গড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে ট্রান্সপোর্ট ব্যবস্থা অর্থাৎ যোগাযোগ ব্যবস্থা। সেই কারণেই শহর দুর্গাপুরে রয়েছে দু নম্বর জাতীয় সড়ক। যার ফলে ওতপ্রোতভাবে এই শহর ভারতবর্ষের বিভিন্ন ছোট বড় শহরের সাথে অনায়াসেই যুক্ত হয়ে রয়েছে। এই শহর দুর্গাপুরে রয়েছে বহু ভাষার ও ধর্মের মানুষের বসবাস। এক কথায় বলতে গেলে শহর দুর্গাপুর বহু ভাষা ও বহু ধর্মের মেলবন্ধনে গঠিত একটি সুসম্পন্ন শহরের মর্যাদা পেয়েছে। ১৯৬১ সালে ব্রিটেনের রানী কুইন এলিজাবেথ এই দুর্গাপুরে এসেছিলেন। পর্যটন ক্ষেত্রে দুর্গাপুর পশ্চিমবঙ্গ তথা ভারতবর্ষের মানচিত্রে এক বিশেষ স্থান অধিকার করে রয়েছে। এই দুর্গাপুরে রয়েছে বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান।
এই দুর্গাপুর শহরের প্রাণকেন্দ্র রূপে বিশেষভাবে পরিচিত সিটি সেন্টার। তার মূল কারণ হলো এই সিটি সেন্টার এই দুর্গাপুরের বহু সরকারি অফিস ও বেসরকারি অফিস একই সাথে রয়েছে একাধিক শপিংমল ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মতন বহু সংস্থা। দুর্গাপুর শহরের মধ্যে রয়েছে উন্নত মানের পরিবহন ব্যবস্থা রয়েছে একাধিক যানবাহন যার ফলে অতি সহজেই যাত্রীরা এক জায়গা থেকে অন্যত্র যাতায়াত করতে পারে অনায়াসেই। শহর দুর্গাপুর কে নিয়ে যতই বলা হবে ততই যেন কোন না কোন একটা ক্ষেত্রে কিছু না কিছু কম রয়েই যাবে। যেহেতু দুর্গাপুর যে প্রাণের শহর দুর্গাপুর যে ভালোবাসার শহর দুর্গাপুর যে এক ঐতিহ্য সম্পন্ন শহর সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।