
ইনফর্ম দুর্গাপুর ডিজিটাল ডেস্ক : পশ্চিম বর্ধমান জেলার শহর দুর্গাপুর এর বাসিন্দা
২০ বছর বয়সী দেবস্মিতা । জন্ম থেকেই সেরিব্রাল পালসি রোগে আক্রান্ত এই দেবস্মিতা । রোগটি হলো immaturity of brain . এর বিকাশ খুব দেরী করে ঘটে, ফলে অন্যান্য অঙ্গের সঞ্চালন খুব দেরি করে হয়। এই রোগটি কোনোদিনই পুরোপুরি ভাবে সারবার নয় । তাই ডাক্তার বাবুরা দেবস্নিতাকে হোপে দিতে বলেছিলেন।
কিন্তু দেবস্মিতার মা ও বাবার অদম্য জেদ ও পরিশ্রমের ফলে দেবস্মিতা একটু একটু করে সুস্থ হতে শুরু করে।
প্রথমে physiotherapy তারপর সাঁতার ,অঙ্কন ও শিল্পের সমস্ত দিকে ওকে দেখিয়ে ও কোনোদিকে দেবস্মীতা সাড়া দিচ্ছে সেটা দেখতে চেয়েছিলো ওর বাবা ও মা।
দেবস্নিতা এক বছর বয়সে প্রথম হামা দিতে শেখে। ۔তিন বছর বয়সে দেবস্মিতাকে একটি জেনারেল স্কুল এ ভর্তি করা হয়েছিল। কিন্তু স্কুল জীবন একেবারে ভালো ছিলনা ওর।
সেই সময় দেবস্মিতা হাঁটতে পারে না ।
প্রতিনিয়ত অপমান ও অবজ্ঞার সাথে জীবন কাটছিলো ওর ।
তারপর আস্তে আস্তে মেয়ে দেয়াল ধরে দাঁড়াতে শুরু করলো। কিন্তু অবলম্বন ছাড়া তখনো হাঁটতে পারতোনা ।এখনো পারেনা , ওর অবলম্বন হলো মা ۔সাড়ে তিন বছর বয়সে ও প্রথম কথা বলতে সেখে।
বাবা, মা ,কাকা তারপর ছোটো ছোটো শব্দ । কথা ,অবশেষে কবিতা ।
এইভাবে দিন চলছিল ,পড়াশুনো ও চলছিল ওর।
পাঁচ বছর বয়সে মায়ের শিখিয়ে দেওয়া কবিতা অন্য স্কুলে বলে দ্বিতীয় পুরস্কার নিয়ে আসে দেবস্মিতা।
কবিতা জীবনে দেবস্মিতার প্রথম জয় ۔ সেই সূত্র ধরে একজন শিক্ষকের কাছে কবিতা শেখা শুরু ۔ তার হাত ধরে বিভিন্ন স্কুলে প্রতিযোগীতা দিয়ে পুরস্কার অর্জন , রবীন্দ্র জয়ন্তী ,নজরুল জয়ন্তী ও পুজোর সময় বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে নিজের একটা ভালো পরিচিতি তৈরী করে ফেলে দেবস্মিতা। ۔ প্রচুর পুরস্কারের মধ্যে সব থেকে বড় পুরস্কার হল মাত্র ১৫ বছর বয়সে সারা বাংলা আবৃত্তি প্রতীযোগীতা দিয়ে প্রথম পুরস্কার। দ্বিতীয় হল নয় বছর বয়সে রাজ্য স্তরের প্রতিযোগিতায় প্রথম হওয়া ।
তাছাড়া বিভিন্ন টিভি۔۔ চ্যানেল এ অনুষ্ঠান করেও দেবস্মিতা ভালো পরিচিতি তৈরী করে ফেলে।
কিন্তু ওর এই সাফল্য স্কুল জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল । স্কুলে কবিতার ব্যাপারটা জানাজানি হওয়া মাত্র ওর উপর মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন শুরু হতে শুরু করে।
ফলস্বরূপ 4 টি স্কুল পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল দেবস্মিতা।
এদিকে মেয়ের যখন মাত্র ১৩ বছর বয়স তখন ব্রততী বন্দোপাধ্যায় এর ওয়ার্ক শপ এ অংশ নেবার সুযোগ পায় ও তারপর ব্রততী পরম্পরা এবং সবশেষে ওনার কাছে আলাদা ভাবে শেখার সুযোগ পায় ।
সেই সময় প্রদীপ গোষ ,গৌরী গোষ ,জগন্নাথ বসু ,উর্মিমালা বসু প্রমুখ ব্যাক্তিত্বদের কাছে তালিমও পায় দেবস্মিতা।
মাত্র ১৭ বছর বয়সে দেবস্মিতার সিডি তৈরী হয় কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ার দরুন সিডি কোম্পানী গুলির কাছে বেগ পেতে হয় ওকে। , অনেক অপমানিত হতে হয় ।
তখন ভাবনা রেকর্ডস এর সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দেয় । ঐ ১৭ বছর বয়সে কলকাতাতে প্রথম অনুষ্ঠান করে সুজাতাসদনে ,তারপর রবীন্দ্র সদনে এবং কোলকাতার নামী মঞ্চ গুলোতেও দেবস্মিতা পারফর্ম করেছে । এবং এখনো করছে ।
মাত্র 16 বছর বয়সে দেবস্মিতা কবিতা শেখানো দিয়ে প্রথম রোজগার শুরু করে ১৫০টাকা নিয়ে , . তারপর বিভিন্ন কোম্পানীর অ্যাড এ ভয়েস দেওয়া ও বিভিন্ন স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠানে অনুষ্ঠান করে যে অর্থ উপার্জন করেছে ।সেগুলি বাবার হাতে তুলে দেয় করোনা কালীন সময়ে দুঃস্থদের সাহায্য করার জন্যও যেহেতু নিজে হাঁটতে পারেনা ।
১৮ বছরের শুরুতে ভাবনা রেকর্ডস থেকে দেবস্মিতার প্রথম রবীন্দ্র কবিতা সিডি প্রণমি প্রকাশিত হয় কোলকাতা প্রেস ক্লাব এবং মাত্র ২০ বছর বয়সে শ্রদ্ধার্ঘ্য নামে দ্বিতীয় সিডি প্রকাশিত হয় প্রেস ক্লাব থেকে । ۔এটি রবীন্দ্র নজরুল কবিতা সংকলন
দেবস্মিতা মাত্র ২০ বছরের জীবনে অনেক সম্মান পায়
তার মধ্যে উল্লেখ যোগ্য হল ১৮ বছর বয়সে ইন্ডিয়ান ফটো লাভার্স ও কালচারাল ফাউন্ডেশন এর বংগো শাখা থেকে কনিষ্ঠতম বাচিক শিল্পী হিসাবে পঞ্চম বর্ষ কৃতী বংগো প্রমীলা কৃতী রত্ন সম্মান পায় দেবস্মিতা। এটি একটি জাতীয় স্তরের সম্মান ।
মনন সাহিত্য পত্রিকা থেকে সম্মান ১৮ বছর বয়সে
কোলকাতা সমাজবার্তা নিউস থেকে শারদ সম্মান ,সিন্ধুরা একাডেমি থেকে ,নদীয়া ডিজিটাল মিডিয়া এসোসিয়েশান থেকে সম্মান পায় সে।
২০ বছর বয়সে আনন্দ মুখর সাহিত্য পত্রিকা থেকে কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি স্মারক সম্মান , বিশ্ব বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতি গৌরব সম্মান ২০২২ ,
আসামের বিখ্যাত কৃষ্টি সম্মান পায় । এছাড়া বিভিন্ন এফ এম ও কলকাতার আকাশবাণীতেও অনুষ্ঠান করছে দেবস্মিতা।
নিজের পড়াশুনো ও কবিতা সামলে প্রতি রবিবার আর্থ সামাজিক দিক দিয়ে পিছিয়ে পরা বাচ্ছাদের পড়ায় ও কবিতা শেখায় বিনা পারিশ্রমিকে ।
ওর ইচ্ছে ওর মতো যারা সমাজে অবহেলিত তাদের কাছে নিজেকে একটা দৃষ্টান্ত তৈরী করা । এবং কবিতাকে পাথেয় করে বিশ্বের দরবারে বাংলা কবিতাকে প্রতিষ্ঠা করা।
এছাড়াও কোলকাতার টিভি চ্যানেল এ প্রচুর অনুষ্ঠান করেছে সে।
করোনাকালীন সময়ে সাড়ে চারশো লাইভ অনুষ্ঠান ও ইন্টারভিউ দেয় এই দেবস্মিতা। কোলকাতা বই মেলাতে শঙ্খ ঘোষ স্মৃতি মঞ্চ থেকে কবি শঙ্খ ঘোষ স্মৃতি স্মারক সম্মানও পায় ۔সে।
বিশ্ব বাংলা নারী সম্মান ২০২২ পায় ,
শ্রুতি সাহিত্য পত্রিকা থেকে বাংলার গর্ব সম্মান ২০২২ পায় ।
হাওড়া গ্রামীণ সংস্কৃতি চক্র থেকে শরৎ স্মৃতি সম্মান পায় শরৎ চন্দ্র বাসভবনে। সম্প্রতি Safe Human Rights Council থেকে দেবস্মিতাকে
তার কাজের জন্য এবং ওর লড়াইকে সম্মান জানিয়ে সম্মানিতও করা হয়।