
বিশেষ প্রতিবেদন : দিনে দিনে গড়ে ওঠা নতুন নতুন শহরতলির কারণে, প্রচুর গাছ প্রতিদিন একটু একটু করে কেটে ফেলা হচ্ছে। আর তারই সাথে সাথে খেজুর গাছের সংখ্যা ধীরে ধীরে কমছে। শহরে তো কমেই গেছে, গ্রামেও খেজুর গাছের সংখ্যাটা একেবারেই নিতান্ত বললেই চলে।
তাই সেই কম সংখ্যক গাছ থেকে খেজুর গুড় তৈরি করা,গুড় প্রস্তুতকারী ও ব্যবসায়ীদের কাছে একটা কষ্টসাধ্য বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও, খেজুর গুড়ের প্রতি মানুষের লোভ একটুও কমেনি।
আর তাছাড়াও, শীতকাল মানেই তো পুলি-পিঠে এবং খেজুর গুড়। তবে সেই সুন্দর খেজুর গুড়ের পরিমাণটা কমে যাওয়ার জন্য এখন খেজুর গুড়ের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে গরম করা চিনির রস। এতে করে রঙ ও থাকছে বাদামি খাঁটি খেজুর গুড়ের মতোই। তাই এই নতুন পদ্ধতিতে বানানো গুড়গুলিতে স্বাদ,গন্ধ কোনোটাই আর আগের খেজুর গুড়ের মতো নেই। তাই সেই পুরনো স্বাদ,গন্ধ ফিরিয়ে আনতে নদীয়ার কৃষ্ণগঞ্জ ব্লক প্রশাসনের তরফ থেকে নেওয়া হল এক নতুন উদ্যোগ।
কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের মাজদিয়া নামক গ্রামে, পার্শ্ববর্তী শিউলি গ্রাম থেকে প্রচুর গুড় ব্যবসায়ীরা গুড় নিয়ে এসে এখানকার হাটে বিক্রি করেন। বলা ভালো, মাজদিয়া হল এই খাঁটি খেজুর গুড়ের জন্যই বিখ্যাত। গুড় তৈরী করা চাষী ও ব্যবসায়ীদের থেকে জানা গিয়েছে, খেজুর গাছ থেকে গুড় তৈরি করার জন্য কোনো একটা ভালো খেজুর গাছ থেকে একটি সপ্তাহে মোট চারবার খেজুরের রস নেওয়া সম্ভবপর হয়।
তারপর খেজুরের রসে শর্করা বাড়ার জন্য কিছুদিন বিশ্রামে রাখা হয় ওই গাছটিকে। এক কেজি গুড় তৈরি করার জন্য, প্রতিটি গাছ থেকে পাওয়া খেজুর রসের সাথে ১০ লিটার রস ভালোভাবে উনুনে জাল দিতে হয়। গুড় প্রস্তুতকারীরা জানিয়েছেন, প্রতিটি গাছ থেকে গড়ে মোট ৭ থেকে ৮ লিটার রস পাওয়া যায় এবং তার সাথে আলাদা করে জ্বালানির খরচ তো রয়েইছে। তাই, ভালো খেজুর গুড় পাওয়ার জন্য খরচ বেশ ভালোই হয় আর প্রতি কেজি খেজুর গুড়ের বিক্রয়দাম কোনোভাবেই ২৮০ থেকে ৩০০ টাকার নীচে দেওয়া সম্ভব হয় না। গুড় প্রস্তুতকারী ও বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এই টাকার থেকে কোনোভাবেই কম দামে খাঁটি খেজুর গুড় বিক্রি করা সম্ভব নয়।
কিন্তু, হাটে বাজারে এখন খেজুর গুড়ের দাম অনেকটাই কমে গেছে। অনেকে তো আবার প্রতি কেজি খেজুর গুড় ১২০ টাকায় বিক্রি করছেন। এখান থেকেই ভালোভাবে বোঝা যাচ্ছে, কম দামে বিক্রি করা গুড়ের মধ্যে কোনো না কোনো ভেজাল তো রয়েইছে।
তাই, গুড়ের মান সম্পর্কে যাচাই করার জন্য, সমস্ত গ্রামবাসী সহ কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের বিডিও অফিসার সৌগত কুমার মহাশয় গুড়ের ল্যাব টেস্টিং এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। গ্রামবাসীরা এতে সন্তুষ্ট এবং খুশি অনুভব করছেন কারণ তাদের তৈরি করা খাঁটি খেজুর গুড় এবং বাজারে কম দামে বিক্রি হওয়া খেজুর গুড়ের মধ্যে এবার পার্থক্য নিরূপণ অনেকটাই সহজ হবে আগের তুলনায়। গুড় ব্যবসায়ীরা যাতে খাঁটি গুড় বিক্রি করে উপযুক্ত মূল্য পান, বিডিও অফিসার এবং অন্যান্য প্রশাসনিক কর্মকর্তারা সেদিকেও নজর রাখছেন।